নিলেশ গায়েন: জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার কমিয়ে রাসায়নিক বা বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ ব্যবহারে ফসলের গুণগত মান
নষ্ট হচ্ছে। এ সব কিছু মাথায় নিয়ে শ্যামনগরের শংকরকাটি গ্রামের গীতা রানী মন্ডল(৩৯) নিজ স্বামী রনজিৎ
মন্ডলের সাথে চ্যালেঞ্জ করে জৈব প্রযুক্তি বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার স্বামীর উৎপাদিত ফসলের পাশাপাশি বেগুন
চাষ করলেন। দেখা গেল অধিক ফসল পেতে অতি উচ্চ মাত্রায় স্বামী রনজিৎ মন্ডল ফসলের ক্ষেতে সার
কীটনাশক ব্যবহার করলেন এবং ফসল পেলেন কম। কিন্ত পাশাপাশি গীতা রানী একই ফসল চাষ করলেন ভার্মি
কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে তাতে দেখা গেল গীতা রানীই বেশি ফসল পেলেন। এলাকার অন্যান্য সদস্যরা গীতার
পরামর্শ অনুযায়ী পরিবারের দেড় বিঘা ভিটাতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, আলু, ঢেড়ষ, মরিচসহ অন্যান্য
শীতকালিন ফসলের চাষ করলেন। এবং এ সকল ফসলের প্রায় অর্ধাংশ বিক্রী করলেন ৪০ হাজার টাকায়। তার
চিরঞ্জিত ও সম্বিত নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। চিরঞ্জিত খুলনা বিএল কলেজে ম্যানেজমেন্ট ও সম্বিত মার্কেটিংএ
ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ সম্পর্কে গীতা রানী বলেন বেসরকারী সংগঠন নকশীকাঁথা
পরিচালিত শংকরকাটি নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সভায় অংশ গ্রহণের সুযোগ হয়।সেখানে ফসলের
ক্ষেতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নতুন
ভাবে শুরু করেন। এবং এ সময় তার ছেলে শংকরকাটি সততা সংগঠনের এক জন সদস্য হওয়ার কারণে ভিএসও
বাংলাদেশের সহায়তায় বিগ লটারী ফান্ডের মাধ্যমে নকশীকাঁথার বাস্তবায়নে ১৫ হাজার টাকা সুদ মুক্ত ঋণ গ্রহণ
করেন। এ ঋণের কিছু টাকা ভার্মি কম্পোস্ট তৈরীতে কাজে লাগিয়ে বাঁকি টাকা বসত ভিটার দেড় বিঘা জমিতে
সবজি চাষ করেন। এর মাঝে ভার্মি তৈরী ও এর ব্যবহার সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বা উপ-সহকারী কৃষি
কর্মকর্তার নিকট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি জানান একটি চারিতে ৩০ কেজি করে মোট ৬৫কেজি সার
এক এক বার উঠিয়ে বিক্রী করেন। এ পর্যন্ত ১২টাকা দরে প্রতি কেজি ৫/৬ মন সার বিক্রী করেছেন ও কেঁচো
বিক্রী করেছেন ১০০ টাকা দরে প্রতি কেজি আনুমানিক ১৭ হাজার টাকার।
তার উৎপাদিত সার নিজ ফসলের ক্ষেতে এবার শীতকালিন সবজিতে ব্যবহার করে ফুলকপি বিক্রী
করেছেন ১০ হাজার টাকার,বাঁধা কপি বিক্রী করেছেন ১২ হাজার টাকার,লাল শাক বিক্রী করেছেন ৪ হাজার
টাকার।
বর্তমানে ক্ষেতে আলু, বেগুন, কাঁচা মরিচ , বরবটি সহ অন্যান্য ফসল রয়েছে। এ সব ফসল তৈরীতে তার
ব্যয় ছিল প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা।শীতকালিন সবজির পর গ্রীস্ম কালিন সবজিও চাষ করবেন বলে জানান।
তিনি ভার্মি কম্পোস্ট ও উৎপাদিত ফসলের আয়ের দ্বারা একটি গাভি ক্রয় করেছেন, নিজ বসত ঘর ছেয়েছেন
এবং প্রতিমাসে দুই সন্তানকে টাকা পাঠাচ্ছেন।
গীতা রানী বলেন তার ভার্মি কম্পোস্ট তৈরী প্রক্রিয়া দেখে প্রতিবেশি অনেকে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরী
করেছেন ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করে ভাল ফলন পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন রাসায়নিক সার ব্যবহারে ফসলের ক্ষেতে বেশি পোকা মাকড় লাগে। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে
ফসলে পোকা মাকড় কম লাগে। তাছাড়া এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। গীতা রানী এখন
ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারের এক জন মডেল কৃষক হিসেবে পাশাপাশি দেওল,বেতাঙ্গি ও অন্যান্য স্থানে প্রশিক্ষণ প্রদান
করেছেন বেশ কয়েকজন কৃষককে।
এ বিষয়ে নকশীকাঁথার পরিচালক চন্দ্রিকা ব্যানার্জি বলেন ভিএসও বাংলাদেশের সহায়তায় বিগলটারী
ফান্ডের অর্থায়নে শংকরকাটি গ্রামকে কৃষিতে একটা আর্দশ গ্রাম তৈরির পরিকল্পনা করেছে এ গ্রামের যুব সম্প্রদায়
ও কৃষকবৃন্দ। তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নকশীকাঁথা পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন