অনাথ মন্ডল:শ্যামনগর উপজেলার সোনার মোড়ে যমুনা নদীতে মহাবারুনী পূণ্যস্নান করেছেন হাজারো পূণ্যার্থী। হিন্দু ধর্মের পঞ্জিকামতে সেই পৌরানিক আমল থেকেই চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে এ পূণ্য স্নান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়।সোনার মোড়ে যমুনা নদীতে মহাবারুণী স্নান ও মেলায় মিলিত হন শ্যামনগরের হাজার হাজার পূণ্যার্থী হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষেরা। তারা পূর্ব পুরুষদের আত্বার শান্তির জন্য তর্পন করে এখানে।নদীর পাড়ে ধর্মীয় পৌরহিতরা সকালেই বসেন পূজা অর্চণার জন্য। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী ও পুরুষেরা পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজেদের পুণ্যলাভ এবং সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে বারুণী স্নানে ছুটে আসেন। এখানে প্রতিবছর নদীতে স্নান ও মেলার পাশাপাশি উপজেলা শাখার উদ্যোগে পূণ্যার্থীদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। চলে গঙ্গা পূজাসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
জানা যায়, বিগত বছরের ন্যায় এবারও মঙ্গলবার ভোর থেকে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে যমুনা নদীতে এ পূণ্য স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বসেছে হরেক রকমের পন্যসামগ্রী নিয়ে গ্রামীন মেলা। চলেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগীত থেকে শুরু নানা আচার অনুষ্ঠান। এ তীথিতে প্রতিবছর সোনার মোড়ে হাজার হাজার পুন্যার্থীদের অংশগ্রহনে চলে ঐতিহ্যবাহী বারুনীর স্নান। পৌরানিক মতে, শিবের স্ত্রী সতী পার্বতীর মৃত্যুর পর শিব তার দেহ নিয়ে তান্ডব নৃত্য করেন। তখন বিষ্ণু চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ডিত করেন, এসময়ে সতী পার্বতীর দেহের একটি অংশ সমুদ্রে (গঙ্গায়) পতিত হয়। এ কারনে এটা ৫১ পীঠের একটি পীঠ। কত বছর পুর্ব থেকে এ স্নান ও মেলা শুরু হয়েছে তা সঠিক করে কেউ বলতে না পারলেও ধারনা করা হচ্ছে পৌরানিক আমল থেকেই মধু কৃষ্ণ ত্রয়োদশীর তীথির স্নান করতে শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার পুন্যার্থীরা পুন্য লাভের আশায় যমুনার তীরে হাজির হয়ে পূণ্যস্নান করেন এবং গঙ্গাপুজায় অংশ নেন। এই পুজারীদের মিলন মেলা থেকেই শুরু হয় স্নান ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
এখানে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও মেলা উপভোগ করতে পরিবার পরিজন নিয়ে ভীড় জমায়। এ স্নান এখন শ্যামনগর উপজেলার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে । পূণ্যস্নান এর কার্য সম্পাদন ও মেলার শান্তি শৃংখলার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন।
এব্যাপারে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, প্রতিবছরের মতো এ বছরও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মাধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এ মহা স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে বারুনী স্নান পর্ব সকাল থেকে অনুষ্ঠিত হলেও মঙ্গলবার ভোর ৪টা ১৩মিনিট গতে আরম্ভ হয়ে সকাল ৯টা ১৩মিনিট পর্যন্ত ধর্মীয়ভাবে মূল স্নান পর্ব চলেছে।
যমুনার তূরে মুধুকৃঞ্চ ত্রয়োদশী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ উপজেলার শাখা বারুণী স্নান, গঙ্গা পূজা, শ্রীমত ভাগবত গীতা পাঠ এবং আনন্দ বাজারে মহাপ্রসাদ বিতরণ করেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একটানা চলে এ সব অনুষ্ঠান। অপরদিকে এ বছর থেকে নতুন করে এই অনষ্ঠানের আয়োজন করায় উপজেলার সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন